ইউএনবিকে ৪০ বছর বয়সী বকর বলেন, ‘গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাতে বাচ্চাদের পোশাক বিক্রি করে যা আয় করি তা দিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার চালাতে পারি…গত ১৫ বছর ধরে এটি করছি। এখন আয়ের উৎস হারিয়ে যাওয়ায় আমার কাছে আর কোনো অর্থ নেই।’
‘এর আগে আমি কখনও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। রমজানের সময় ভালো ব্যবসা করতাম, তবে এবার আমার ব্যবসা তছনছ হয়ে গেছে...আমাদের পক্ষে এখন টিকে থাকা সত্যিই কঠিন। আমার বাচ্চারা যখন খাবারের জন্য কাঁদে তখন হৃদয় ছিদ্র হয়ে যায়,’ বলছিলেন বকর।
তার মতো হাজার হাজার হকারের জীবিকা চলমান করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ফলে নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া এমন অনেক লোক আছেন যারা সরকারি ত্রাণসামগ্রীও গ্রহণ করতে পারছেন না।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে হকার সংগঠনগুলোর নেতারা করোনার এ কঠিন সময়ে প্রতিটি জেলার হকারদের একটি সঠিক তালিকা তৈরি করে শিগগিরই তাদের খাদ্য সহায়তা বিতরণের আহ্বান জানান। সেই সাথে তারা করোনাভাইরাস পরবর্তী বিশেষ তহবিল গঠনের জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন। যাতে সংকট শেষ হওয়ার পর এ তহবিলের সহায়তায় হকারদের পরিবর্তন ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের নির্বাহী সভাপতি মুরশিকুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, সঠিক কোনো তালিকা না থাকলেও বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ হকার রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সব হকার তাদের জীবন-জীবিকা চালাতে খুব কঠিন সময় পার করছেন। তবে পরিবহন চলাচল স্থগিতের কারণে যারা ঢাকায় আটকা পড়েছেন তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কাজের বাইরে থাকায় তারা দিনে একবারের খাবারও জোগার করতে পারছেন না।’
মুরশিকুল ইসলাম বলেন, শুধু ঢাকা শহরে কয়েক লাখ হকার রয়েছেন যারা পবিত্র রমজান মাসে ভালো উপার্জন করতেন, তবে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। ‘এমনকি তারা সরকারের থেকে কোনো সহায়তা পাননি এবং তাদের অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারে রয়েছেন।’
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, তিনি রমজান মাসে এক কোটি দরিদ্রকে সহায়তা করবেন। তাই সরকারকে অনুরোধ করব, এ কর্মসূচির আওতায় হকারদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্বল্প সুদে তাদের ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক,’ মুরশিকুল ইসলাম যোগ করেন।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশন এবং হকার্স লীগ সভাপতি এমএ কাশেম বলেন, তারা কিছু হকারকে সহায়তা দিয়েছেন তবে এটি পর্যাপ্ত ছিল না। ধনী লোকদের দরিদ্রদের বাঁচাতে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে তিনি মনে করেন।
কাশেম আরও বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) হকারদের একটি তালিকা তৈরি শুরু করেছে, তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তারা এটি সম্পন্ন করতে পারেনি। ডিএসসিসি বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, পল্টন, নিউমার্কেট ও শাহাবাগের প্রায় ৪ হাজার হকারকে তালিকাভুক্ত করেছে। সবাই এখন গভীর সমস্যায় পড়েছেন। তবে আমরা চাই সব হকার তাদের ব্যবসা সঠিকভাবে করুক।’
হকার্স লীগ নেতা বলেন, সরকারের উচিত হকারদের যথাযথভাবে সহায়তা করা এবং তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়কারী ‘লাইনম্যান’ থেকে তাদের বাঁচানো।
এদিকে, ঢাকা সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক এম আবদুল মান্নান বলেন, মহামারির কারণে সংবাদপত্র বিক্রি দ্রুত হ্রাস পেয়েছে বলে সংবাদপত্র হকাররা মারাত্মক সংকটে রয়েছেন।
মান্নান বলেন, ‘রাজধানীতে প্রায় ৫ হাজার সংবাদপত্র হকার এবং দেশের অন্য জায়গায় ১৫ হাজার হকার রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই তীব্র আর্থিক সংকটে পড়েছেন।’
পুরান ঢাকার এক হকার আবদুস সালাম বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলররা রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা দেখে ত্রাণ গ্রহণকারীদের তালিকা তৈরি করেন এবং তালিকায় এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করেন যারা প্রকৃত দরিদ্রের পরিবর্তে ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা। ‘কিন্তু আমরা সত্যিই সত্যিই সমস্যায় আছি। সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যাতে মহামারির মধ্যে দরিদ্ররা বাঁচতে পারেন।’